গত ১০ই অক্টোবর জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে “‘অনেকের আপত্তিতে’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শরৎ উৎসব স্থগিত, বাতিল নয়: চারুকলার ডিন ” নামে। এরপর একই দিনে “বকুলতলায় স্থগিত, গেন্ডারিয়াতেও ‘শরৎ উৎসব’ করতে পারেনি সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী” শিরোনামে আরেকটি খবর প্রকাশ করে। এই উৎসব বন্ধ করা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয় যে ডাকসুতে শিবিরের নিয়ন্ত্রণ ও জামাতপন্থী ভিসি নিয়াজের কারণে চারুকলায় শরৎ উৎসব বন্ধ হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন ড: মো: আজহারুল ইসলাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন খবরে বলা হয়, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীকে ফ্যাসিবাদী আখ্যা দিয়ে আপত্তি তোলে ফ্যাসিবাদবিরোধী নানা পক্ষ। এর প্রেক্ষিতে উৎসবটি স্থগিত করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।

তবে দৈনিক প্রথম আলোতে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী বলেন, তিনি আওয়ামীলীগের নামে-গন্ধে কোথাও কোনোদিন ছিলেন না। যদিও The Dacca-র অনুসন্ধানে এর বিপরীত চিত্র পাওয়া যায়।
বিভিন্ন মিডিয়ায় সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দেওয়া মানজার চৌধুরী সুইট একইসাথে বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। যার সত্যতা তার ফেসবুক একাউন্টেও পাওয়া যায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সক্রিয়তা কম থাকলেও তার কার্যকলাপে রয়েছে আওয়ামী লীগের নানান ছোয়া।

২০২২ সালের ২৩ আগষ্টেরবাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের একটি প্রোগ্রামে দেখা যায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও ময়মনসিংহ-৫ আসনের এমপি কে এম খালেদ। তিনি ২০১৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। একই অনুষ্ঠানে মানজার চৌধুরী সুইটকেও স্বাগত বক্তব্য দিতে দেখা যায়। সাথে সঙ্গীত পরিবেশন করে ঢাবির চারুকলায় শরৎ উৎসব করতে চাওয়ার আয়োজক সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী।
এছাড়া গত বছর সেপ্টেম্বরের ১৭ তারিখে আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ও নীলফামারী - ২ আসনের এমপি (৫ই আগষ্ট ২০২৪ অব্দি) আসাদুজ্জামান নূরের মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দেয় ১১টি সাংস্কৃতিক সংগঠন, যার মধ্যে মানজার চৌধুরীর বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদও রয়েছে। খবরটি দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত হয় এবং ১৮ই সেপ্টেম্বর পতিত ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামীলীগের অফিসিয়াল পেজ থেকেও পোস্ট করা হয়।

এর সাথে The Dacca মানজার চৌধুরীর ফেসবুক একাউন্টে ২০১৮ সালে পোস্টকৃত একটি ছবিও পায় যেখানে তার সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও জুলাই গণহত্যার আসামি আসাদুজ্জামান খানকে দেখা যায়।

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সাথে মানজারের ছবি দেখা গেলেও তার সত্যতা The Dacca নিশ্চিত করতে পারেনি।
সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শুধু মানজার চৌধুরীই নন, আরও অনেক সদস্যের ও ফ্যাসিস্টপ্রীতি লক্ষণীয়। শিল্পীগোষ্ঠীটির কক্সবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক মনির মোবারকের কার্যকলাপ এখানে স্পষ্ট।

মোবারকের ফেসবুকে দেখা যায়, গত বছর জুলাই বিপ্লবের সময়ে ১৮ তারিখে তিনি সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের নড়াইল জেলা শাখার নেতা স্বপ্নীল কতৃক পোস্টকৃত একটি ভিডিও ফুটেজ শেয়ার দেন। ভিডিওতে ছাত্র জনতাকে দমন করতে গিয়ে গণপিটুনি খাওয়া ছাত্রলীগের এক নেতার কাতরানোর ফুটেজ দেখানো হয় বিরাট বর্বরতা হিসেবে।


এছাড়াও গত বছর ১০ই আগস্ট, মনির বাংলাদেশের জনগণকে ২৪ এর বিপ্লবকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা নয় বরং শুধুমাত্র একটি "সরকার পতন" হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং বলেন যে, দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করা হচ্ছে।

আবার, ২০২৪ সালের ১৪ই আগস্টে স্বৈরাচার শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কবিতা পোস্ট করেন তিনি। সাথে, ১৫ই আগস্ট সিপাহী জনতার বিপ্লবকে খুনিচক্র হিসেবে আখ্যায়িতও করেন তিনি।


সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী সংশ্লিষ্ট এসব ব্যাক্তিবর্গের কার্যকলাপে এটি স্পষ্ট যে, তাদের সাথে পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ধরনের সম্পর্ক রয়েছে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট আসা অভিযোগগুলির সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ। তাই, কোনো মৌলবাদ বা উগ্র ডানপন্থা নয়, আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগেই তাদের উৎসব স্থগিত করা হয়েছে।
