৩০ অক্টোবর, ১৯৭৫ এ দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত সংবাদ-
"সাবেক প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত বাসভবনে পাওয়া গিয়াছে:
বার্তা সংস্থা বাসস জানান, সাবেক প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমণ্ডিস্থ ৩২ নম্বর সড়কের ব্যক্তিগত বাসভবনে যে সমস্ত জিনিস পাওয়া গিয়াছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র গতকাল (বুধবার) উহার একটি তালিকা প্রকাশ প্রকাশ করিয়াছেন। তিনি জানান যে, সাবেক প্রেসিডেন্টের বাড়ীতে যে সমস্ত জিনিস পাওয়া গিয়াছে তাহার মধ্যে ৭ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের প্লাটিনাম, হীরক, মুক্তা সেট ও স্বর্ণালংকার; ১৭হাজার ৫ শত টাকা মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা এবং আগ্নেয়াস্ত্র উল্লেখযোগ্য।
বিদেশী রাষ্ট্রগুলি হইতে প্রদত্ত প্রায় ১ লক্ষ টাকা মূল্যের উপহার সামগ্রী, বাংলাদেশী মুদ্রায় নগদ ১৪ হাজার ৪ শত ৬১ টাকা এবং ৬ শত ২১টি বাতিলকৃত শতকী নোট অর্থাৎ ৬২ হাজার ১শত টাকাও প্রায় দ্রব্যাদির তালিকার অন্তর্গত।
তিনি উল্লেখ করেন যে, একজন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন আর্মী অফিসার ও একজন পুলিশ অফিসারকে লইয়া গঠিত তিন সদস্যের একটি টীম গত ১৬ই আগষ্ট হইতে ২৮শে আগষ্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত বাসভবনে এই দ্রব্য তালিকা তৈরী করেন।
তালিকায় দেখা যায় যে, ওয়াকি-টকিসহ বিদেশে তৈরী মূল্যবান দ্রব্যাদি ছাড়াও তাঁহারবাড়ীতে তিনটি ব্যক্তিগত মোটর গাড়ী পাওয়া গিয়াছে। এতদ্ব্যতীত ধানমণ্ডির বাড়ীতে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার মধ্যে রহিয়াছে ৮ হাজার ৯ শত ৯৯ টাকা মূল্যের ভারতীয় মুদ্রা এবং ১ হাজার টাকা মূল্যের টালিং পাউণ্ড।
সাবেক প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ীতে যে সব আয়েয়াস্ত্র পাওয়া গিয়াছে তাহার মধ্যে একটি ভারী মেশিন গান, দুইটি হাল্কা মেশিনগান, তিনটি এস এম জি, ৮টি স্টেনগান, ১০টি আধা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল এবং ৬০টি গ্রেনেডসহ গোলা-বারুদ অন্যতম।

মুখপাত্রটি বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট, তাঁহার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও পুত্রবধূদের বাংলাদেশের ব্যাংকসমূহে ২২টি একাউন্ট ছিল। এই সমস্ত একাউন্টের তিনটি ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রীর নামে। একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নামেও বেগম মুজিবের ব্যাংক একাউন্ট ছিল। বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা তাহাদের মোট ২ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকার একাউন্ট আটক করা হইয়াছে।
তালিকায় একটি দলিলের যে উল্লেখ রহিয়াছে তাহাতে দেখা যায় যে, সাবেক প্রেসিডেন্টের স্ত্রী মিসেস ফজিলাতুন্নেসা খুলনার দৌলতপুরে অবস্থিত একটি গুদাম বার্ষিক ৪৯ হাজার টাকায় পাট মূল্য স্থিতিশীলকরণ সংস্থার নিকট ভাড়া দিয়াছিলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রটি জানান যে, এই দ্রব্য তালিকায় সাবেক প্রেসিডেন্টের যাবতীয় সম্পদের হিসাব দেওয়া হয় নাই, কেবল তাঁহার ৩২ নম্বর রোডের বাড়ীতে যাহা পাওয়া গিয়াছে তাহাই উল্লেখ করা হইয়াছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে ও বিদেশে যাবতীয় স্তাবর অস্থাবর সম্পত্তির ব্যাপারে তদন্ত চলিতেছে বলিয়া মুখপাত্র উল্লেখ করেন।"
