সম্প্রতি গুলশান থানা পুলিশ কয়েকজন ছাত্র সমন্বয়ককে চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে ধরে । অভিযোগ রয়েছে, তারা এক সময়ের আওয়ামী লীগ দলীয় নারী সংসদ সদস্যের বাসায় টাকা আনতে গিয়েছিলেন। এই ঘটনাকে ঘিরে কিছু গণমাধ্যম যেন আশীর্বাদ খুঁজে পেয়েছে। চাঁদাবাজির অভিযোগকে সামনে রেখে তারা আন্দোলনের সামনের সারির কয়েকজন ছাত্রনেতাদের ‘মিডিয়া ট্রায়ালের’ মুখোমুখি করছে।
গত কয়েক দিনের কিছু মিডিয়া হেডলাইন পর্যালোচনা করে, The Dacca টিম যোগাযোগ করে অভ্যুত্থানের কিছু অংশীজনের সাথে। যাদের মধ্যে অন্যতম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই অভ্যুত্থান-সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার।
তৎকালীন সরকারের চাপ এবং বিভিন্ন এজেন্সির হস্তক্ষেপে রাজশাহীতে আন্দোলনের নেতৃস্থানীয়রা পিছু হটলে, আম্মার পুনরায় নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। আন্দোলন পরবর্তী সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানকে জাতীয়ভাবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে।
২০২৫ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপন মূলত ঢাকা-কেন্দ্রিক থাকায় অন্যান্য জেলা বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বড় পরিসরে অংশ নিতে পারেনি। সে কারণেই সালাউদ্দিন আম্মার নিজ উদ্যোগে কয়েকটি কর্মসূচির পরিকল্পনা করেন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্পন্সরশিপ প্রস্তাব পাঠান। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে ফেস্ট, কনসার্ট, সেমিনার আয়োজনের অর্থায়ন সাধারণত এরকম কর্পোরেট স্পন্সরের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।
The Dacca টিম আম্মারের তৈরি করা স্পন্সরশিপ প্রপোজাল বিশ্লেষণ করে দেখতে পায়, এটি একটি চিরাচরিত, প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মে তৈরি প্রপোজাল। যেখানে স্পন্সররা বিনিময়ে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল। কোনো জোরপূর্বক চাপ প্রয়োগ বা প্রতারণার চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
আম্মার বলেন:
“৫ ও ৬ আগস্ট বিজয় উৎসবের একটি প্রস্তাব নিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে যাই। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট সীমিত, তবে প্রশাসন থেকে নন-ফিনান্সিয়াল সব ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যাবে। এরপর আমরা ভাইস চ্যান্সেলর ও ছাত্র উপদেষ্টার স্বাক্ষর ও সিলসহ প্রপোজাল তৈরি করে ব্যাংক ও কোম্পানির হেড অফিসে জমা দেই।”
তিনি আরও জানান,
“মিডিয়ায় বলা হচ্ছে ৭০টি অফিসে পাঠানো হয়েছে। আসলে ছিল আট পৃষ্ঠার একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তাবনা। মোট ২৩টি প্রস্তাব বানিয়েছিলাম, কিন্তু ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ায় মাত্র ১৯টি জমা দিতে পেরেছি।”
যেসব প্রতিষ্ঠানে প্রস্তাব পাঠানো হয়:
Rajshahi City Corporation
Chamber of Commerce
UCC
Akij Group
City Bank
JTI
Pran
Runner
Unilever
Mutual Trust Bank
Walton
BRAC Bank
Dutch-Bangla Bank
Jamuna Bank
Dhaka Bank
FSIB
EXIM Bank
Top Ten
Bank Asia
দুঃখজনকভাবে, ব্যাংকগুলোর কোনোটি স্পন্সর করেনি। তারা জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার ভিত্তিতে তারা শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে অনুদান দিয়েছে।
সবকিছু স্বচ্ছ থাকা সত্ত্বেও কিছু মিডিয়া ভিন্ন শব্দ ও ব্যাখ্যা দিয়ে সালাউদ্দিন আম্মারের এই প্রক্রিয়াকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে। বিশেষ করে প্রথম আলোর মতো জাতীয় দৈনিক বিভ্রান্তিকর হেডলাইন দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে, যা জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।
এ বিষয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যান্য নেতারাও মত দিয়েছেন। যেমন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আব্বু তৌহিদ সিয়াম লিখেছেন:
“বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, এজেন্সি এবং লিগাররা সমন্বয়ক, এনসিপি ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সদস্যদের নিয়ে একটি ‘ক্র্যাকডাউন’ পরিকল্পনা করেছে। তাদের উদ্দেশ্য, সমন্বয়কদের প্রশ্নবিদ্ধ করে পুরো জুলাই আন্দোলনকে অস্বীকারযোগ্য করে তোলা।”
অনেক অংশীজন মনে করেন,
“অভ্যুত্থানের পরপরই আমরা মিডিয়া সংস্কার করতে পারিনি, এখন তার খেসারত দিচ্ছি। আজ মিডিয়া আওয়ামী লীগের বিবৃতি প্রতিষ্ঠা করছে এবং ছাত্রদের বিপক্ষে জনমত গড়ে তুলছে।”
Student Coordinator Did Not Extort Money, Rather Asked for Sponsorship
