নৈতিক স্খলনের অভিযোগে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা সত্ত্বেও সম্প্রতি এনসিপির একটি অনুষ্ঠানে দেখা গেছে দলটির নেতা সরোয়ার তুষারকে৷
১৯ জুন ২০২৫ তারিখ নীলা ইসরাফিল নামের একজন নারী ফেসবুকে জাতীয় নাগরিক পার্টি - এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে একটি ফেসবুক পোস্ট দেন। উক্ত পোস্টে উনি দাবি করেন যে সাংগঠনিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে সারোয়ার তুষার বিভিন্ন সময়ে তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছেন এবং বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছেন।
গোপনীয়তার সাথে সাংগঠনিকভাবে ব্যাপারটি সমাধান করতে চাইলে সারোয়ার তুষার তাকে "এনসিপি থেকে দূরে রাখতে, আমাকে বিভিন্ন সেল থেকে দূরে রাখতে, সাংস্কৃতিক সেল, নারী উইং, মহানগর কমিটি থেকে দূরে রাখার জন্য বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটাতে থাকে" বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়টি নিয়ে নীলা ইসরাফিল এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে জানালে তাকে ঢাকা মহানগরের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) এস এম শাহরিয়ার ও যুগ্ম সদস্য সচিব মোহাম্মদ নিজাম উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তবে তাদের সাথে যোগাযোগ করে সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু অডিও রেকর্ড দেয়ার পরদিন সকালে "অডিওটি কেটে সামাজিক মিডিয়ায় প্রকাশ করা"র ব্যাপারে অভিযোগ করেন তিনি।
The Dacca টিম এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখতে পায় ১৬ জুন ২০২৫ তারিখ থেকেই বিভিন্ন ফেসবুক প্রোফাইল ও পেইজে নীলা ইসরাফিল ও সারোয়ার তুষারের মধ্যকার কল রেকর্ডের সম্পূর্ণ বা উল্লেখযোগ্য অংশ ভেসে বেড়ানো শুরু করে। তাদের কথোপকথনের চুম্বক অংশ ও স্ক্রিনশট নিয়ে ১৭ জুন 'চ্যানেল আই' বিস্তারিত রিপোর্ট করে। একই দিনে The Dacca-ও উক্ত ইস্যুতে একটি সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট করে। তবে তখন পর্যন্ত কেউ ফোন রেকর্ডের অপরপাশে থাকা নারীর পরিচয় না জানলেও ১৯ জুন নিজের পরিচয় প্রকাশ করেই ফেসবুক পোস্টটি দেন নীলা ইসরাফিল।
একাধিক অডিও প্রমাণ ভাইরাল হলে নেটিজেনদের চাপে অভিযোগ আমলে নিয়ে ১৭ জুন এনসিপি সরোয়ার তুষারকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয় এবং "বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দলের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের যৌথ নির্দেশনা" প্রদান করা হয়।
এরপর প্রায় এক মাস সময় ধরে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির কোন কর্মসূচীতে সারোয়ার তুষারকে দেখা যায় নি। তবে ২৭ জুলাই বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ-এর একটি কর্মশালায় সারোয়ার তুষারকে বক্তা হিসাবে দেখা যায়। ছাত্রসংসদকে এনসিপির লেজুড় হিসাবে দাবি করে নীলা ইসরাফিল-সহ বিভিন্ন এক্টিভিস্ট ফেসবুকে এ বিষয়ে সমালোচনা করেন। এরপর ২৮ জুলাই ২০২৫ তারিখ নীলা ইসরাফিল এনসিপি থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে একটি পোস্ট করেন।
তবে The Dacca এ ব্যাপারে জানতে পেরেছে যে জাতীয় নাগরিক পার্টি গঠিত হওয়ার পর এর কোন কমিটি বা উপকমিটি-তে নীলা ইসরাফিল ছিলেন না। তবে তিনি জাতীয় নাগরিক পার্টি সংশ্লিষ্ট সংগঠন জাতীয় নাগরিক কমিটির একটি থানা কমিটির সদস্য ছিলেন।
কাগজে কলমে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ যেহেতু এনসিপির লেজুড় নয়, বরং ভাতৃপ্রতিম হিসাবে দাবি করে, সেহেতু তাদের কর্মশালায় সারোয়ার তুষারের অংশগ্রহণে বাধা দেয়া এনসিপির এখতিয়ারের বাইরে। তবে গত ৩০ জুলাই ২০২৫ তারিখ নরসিংদীতে এনসিপির পদযাত্রা শেষে স্থানীয় শহীদদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করে এনসিপি নেতারা। উক্ত অনুষ্ঠানে সারোয়ার তুষারকেও শহীদ পরিবারের সাথে মতবিনিময় করতে দেখা যায়।
পূর্বে প্রকাশিত কারণ দর্শানো নোটিশে এনসিপির কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়া হলেও এনসিপির অনুষ্ঠানে সারোয়ার তুষারের উপস্থিতি নেটিজেনদের মধ্যে প্রশ্নের উদ্বেগ ঘটিয়েছে। The Dacca টিম এনসিপির ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ থেকে এমন কোন বিবৃতি বা নোটিশ পায়নি যেখানে সারোয়ার তুষারকে পুনরায় দলীয় কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে কিংবা এ ব্যাপারটি নিষ্পত্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্বপ্ন দেখিয়ে নারী বা হ্যারাজমেন্ট ইস্যুতে এনসিপির বর্তমান অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ।
এ ব্যাপারে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব সালেহ উদ্দিন সিফাতের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "তিনি নরসিংদীতে আয়োজিত এনসিপি'র পথসভা ও পদযাত্রা কোনোটিতেই ছিলেন না। এবং উনার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত নিষ্পত্তি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত উনার ওপর আরোপিত অন্তর্বর্তী রায় বলবৎ আছে।"
তবে শহীদ পরিবারদের সাথে সাক্ষাতের সময় সারোয়ার তুষারের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান যে অনুষ্ঠানটি এনসিপিরই আয়োজন ছিল তবে সেটি এনসিপির "সাংগঠনিক প্রোগ্রাম ছিল না"। গণঅভ্যুত্থানের নেতা হিসাবে নাহিদ ইসলাম শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করেন এবং সারোয়ার তুষার সেখানে উপস্থিত ছিলেন।