গত ২৫ মে ২০২৫ তারিখ বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) এর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের অভিযোগ আনেন। সম্মেলনে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এলএফএমইএবি, বিসিআই ও আইসিসি-বাংলাদেশ প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। এসময় তিনি বলেন, “যেভাবে তখন দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে, আজ ২০২৫ সালে এসে একইভাবে আমাদের শিল্প উদ্যোক্তা ও শিল্পকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে।”

একইসাথে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ারুল আজিম চৌধুরী পারভেজ বলেন, “সাভার, গাজীপুর ও আশুলিয়ায় ১৫০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি সরকার কয়েক সপ্তাহ আগেই দিয়েছিল। পাশাপাশি অতিরিক্ত এলএনজি কার্গো থেকে আরও ১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহের কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি।”

তাদের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে পেট্রোবাংলা তাদের প্রেস রিলিজে ২০২৫ ও ২০২৪ এর গ্যাস সরবরাহের তুলনামূলক উপাত্ত প্রদান করে। শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উক্ত প্রেস রিলিজটি তার ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার দিয়ে দাবি করেন যে গ্যাসের সরবরাহ “ধারাবাহিকভাবে বাড়ছেই।” একইসাথে তিনি গ্যাস সংকটের অভিযোগকে মিথ্যা দাবি করে শওকত আজিজ রাসেলকে “এক রাজনৈতিক দলের ব্যবসায়ী নেতা” হিসাবে অভিহিত করে তার দাবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হওয়ার ইঙ্গিত দেন। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ লিখেন, “জনতার মঞ্চের বিভিন্ন উইংয়ের মুভগুলো স্পষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘদিনের লুটপাটের সেটেলমেন্ট ভেঙে যাবে বলে কোন সংস্কারই আর ভালো লাগছে না।”

কিন্তু গত ৩১ মে ২০২৫ তারিখ, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি টেক্সটাইল কারখানা পরিদর্শনের পর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান গ্যাস সংকটের কথা স্বীকার করেন। এসময় কারখানার মালিক দিনে ৮ ঘন্টাও গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ার অভিযোগ করলে ফাওজুল কবির খান তাতে সম্মতি জানান এবং সেদিন সন্ধ্যার মধ্যে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১–এর কার্যালয় পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি বলেন, “দুই-এক দিন আগেই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হতো। কিন্তু সমুদ্র উত্তাল থাকায় জাহাজ থেকে গ্যাস মূল সঞ্চালন লাইনে পাঠানো সম্ভব হয়নি। এখন সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে। আজ থেকেই গ্যাস সরবরাহ বাড়বে।”

স্পষ্টতই গ্যাস সংকট বিষয়ে দুই উপদেষ্টার বক্তব্যের মধ্যে বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বক্তব্যের তথ্যসূত্র হচ্ছে পেট্রোবাংলা যেখানে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান সরেজমিনে কারখানা পরিদর্শন করেছেন। পেট্রোবাংলা যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করছে বলে দবি করেছে সেটি কোন তৃতীয় পক্ষের দ্বারা যাচাই করা যায়নি।

উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান ৩১ মে সন্ধ্যার মধ্যে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে সমস্যার সমাধান হয়েছে কিনা এই ব্যাপারে কোন তথ্য The Dacca টিম কোন গণমাধ্যমে পায়নি।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে গ্যাসের বাৎসরিক সিস্টেম লস প্রায় ১০%। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সর্বোচ্চ সিস্টেম লস হওয়া উচিত ০.৩০%।

Tagged in:

Analysis

Last Update: August 12, 2025