ঢাকার সাভারের আশুলিয়া এলাকার খাগানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (DIU) এবং সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘটিত সংঘর্ষের ঘটনাটি বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই ঘটনায় উভয়পক্ষ পরস্পরকে দায়ী করে বিবৃতি দিয়েছে। 'দি ডাক্কা টিম'-এর অনুসন্ধানে ঘটনার সূত্রপাত, ক্রমানুগত চলা আক্রমণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার বিশদ বিবরণ পাওয়া গেছে।

সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে রবিবার সন্ধ্যায় একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে। একাধিক সূত্রের দাবি, সিটি ইউনিভার্সিটির একজন শিক্ষার্থীর মোটরসাইকেল থেকে অসাবধানতাবশত নিক্ষিপ্ত থুথু বা কফ পার্শ্ববর্তী ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর গায়ে পড়লে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। যদিও প্রারম্ভিক এই দ্বন্দ্ব রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে মৌখিকভাবে মিটিয়ে ফেলা হয়েছিল বলে জানা যায়, কিন্তু এর রেশ স্থায়ী হয়নি। এরই জের ধরে রাত ১২ টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী দেশীয় অস্ত্র ও ইট-পাটকেল নিয়ে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের ভাড়া করা হোস্টেল 'ব্যাচেলর প্যারাডাইস'-এ হামলা চালায়। ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এই হামলায় দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার ও পরিকল্পিত আক্রমণের অভিযোগ আনা হয়েছে।

প্রথম হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীরা সংগঠিত হয়ে পাল্টা আক্রমণ চালায়। মধ্যরাতের পর ড্যাফোডিলের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এই হামলায় সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে ব্যাপক ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়, প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর করা হয় এবং কম্পিউটারসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল লুট হয় বলে দাবী করেছে বিশ্ববিদ্যালয় । সবচেয়ে গুরুতর দিক হলো, এই সময় তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় বাস, একটি প্রাইভেটকার ও দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। উভয় পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। সিটি ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, এই ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সংঘর্ষের ফলশ্রুতিতে, সিটি ইউনিভার্সিটিতে হামলা চালিয়ে ফিরে আসার সময় ড্যাফোডিলের ১১ জন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এই শিক্ষার্থীদের শুধু অবরুদ্ধই করা হয়নি, বরং তাদের মারধর করা হয়েছে এবং জোরপূর্বক লিখিত মুচলেকা আদায় করা হয়েছে, যেখানে তাদের উপাচার্যের নির্দেশনায় হামলা চালানোর কথা স্বীকার করতে বাধ্য করা হয়েছে। এছাড়া, অবরুদ্ধ শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার বিষয়টি প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে, ড্যাফোডিল ক্যাম্পাসে পাল্টা হামলার উদ্দেশ্যে সিটি ইউনিভার্সিটির কিছু শিক্ষার্থী পুনরায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অগ্রসর হয়েছিল বলেও ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল রাতে সিটি ইউনিভার্সিটিতে ড্রোন দিয়ে হামলা করা হয়েছে এমন কয়েকটি তথ্য মূলধারার গণমাধ্যমে প্রচার হয় এরই রেশ ধরে সকাল বেলা স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের বাকবিতন্ডা হয়ে বলে জানিয়েছে কয়েকজন শিক্ষার্থী । গতকালকে রাতের ঘটনার জেরে যমুনা টিভি ও দেশ টিভির সাংবাদিকদের উপর আক্রমণাত্মক হতে দেখা যায় সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের। উল্লেখ্য, এই দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অতীতেও বেশ কিছু ছোটখাটো বিরোধের রেকর্ড রয়েছে।

প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (পুনাব) এবং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট এলায়েন্স বাংলাদেশ (পুসাব) অবিলম্বে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট অ্যাক্টিভিস্টরা এই ঘটনাকে 'অসহিষ্ণুতা' হিসেবে চিহ্নিত করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা স্মরণ করিয়ে দেন যে, 'জুলাই অভ্যুত্থানের' সময় জাহাঙ্গীর নগরে লীগ সমর্থিত গোষ্ঠীর আক্রমণের বিরুদ্ধে ড্যাফোডিল ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা একত্রে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।গতকালকের ঘটনা যেন তার বিপরীত রূপ দেখালো। তাদের মতে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ধরনের অভ্যন্তরীণ সংঘাত জাতীয় ঐক্য ও শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশের জন্য একটি বড় হুমকি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উভয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উভয় প্রতিষ্ঠানেই ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

Last Update: October 28, 2025